বাড়িতে সহজে ডালিম/আনার/বেদানার চাষ,
- Ezaz Maruf
- May 3, 2019
- 3 min read

*আসুন জেনে নেই বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে কিভাবে ডালিম বা আনার বা বেদানা চাষ করতে হবে
*কিভাবে ডালিম/আনার/বেদানা চাষের টব/মাটি তৈরি করবেন
*ডালিম/আনার/বেদানা চাষের কি ধরণের টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই করবেন
*ডালিম/আনার/বেদানার জাত বাছাই করা
*ডালিম/আনার/বেদানা চাষ/রোপনের সঠিক সময়
*কিভাবে ডালিম/আনার/বেদানার বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন
সঠিক নিয়মে ডালিম/আনার/বেদানা চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল
*ডালিম/আনার/বেদানা চাষে পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন
*কিভাবে ডালিম/আনার/বেদানা বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন
*ডালিম/আনার/বেদানার খাদ্য গুণাগুণ
*ডালিম/আনার/বেদানার ঔষধি গুনাগুন
*কখন ডালিম/আনার/বেদানা সংগ্রহ করবেন
*কি পরিমাণ ডালিম/আনার/বেদানা পাওয়া যাবে
আসুন জেনে নেই বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে কিভাবে ডালিম বা আনার বা বেদানা চাষ করতে হবে:
ডালিম নামটি সকলের সাথেই পরিচিত। আমাদের সকলেরই এই ফলটি অনেক প্রিয়। ডালিমের উন্নত জাতই হল আনার বা বেদানা। ছোট বড় সকলেরই পছন্দ এই ফল। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে চাষ করতে পারেন এই ফলের। এটা বাড়িতে চাষ করা খুবই সোজা। আসুন জেনে নেই কিভাবে আপনি এটাকে বাড়িতে চাষ করবেন।
কিভাবে ডালিম/আনার/বেদানা চাষের টব/মাটি তৈরি করবেন:
বেদানা চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমেই সঠিক মাটি নির্বাচন করতে হবে। প্রায় সব ধরণের মাটিতেই ডালিম চাষ করা যায়। তবে মনে রাখবেন ডালিম বা আনার বা বেদানা চাষের জন্য সবচাইতে উত্তম মাটি হল দোআঁশ অথবা বেলে দোআঁশ মাটি। মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
ডালিম/আনার/বেদানা চাষের কি ধরণের টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই করবেন:
ডালিম বেদানা বা আনার চাষের জন্য আপনি মাঝারি সাইজের টব অথবা অর্ধেক ড্রাম নির্বাচন করতে পারেন। এগুলোই ডালিম চাষ করার জন্য উত্তম। এছাড়াও আপনি আপনার বাড়ির উঠোনে অথবা আঙ্গিনায় স্বল্প পরিসরে এই ফলের চাষ করতে পারেন।
ডালিম/আনার/বেদানার জাত বাছাই করা:
পৃথিবীতে অনেক ধরনের ডালিমের জাত আছে। এর মধ্যে উন্নত জাতের ডালিম বা আনার বা বেদানা হচ্ছে রুবি, পেপার সেল, ওয়ান্ডারফুল, মাসকেট রেড প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তবে আমাদের দেশে চাষের জন্য উপযোগী হল ঢোল্কা, ভাদকি ও জিবিজিআই, বেদানা ও কান্ধারী।
ডালিম/আনার/বেদানা চাষ/রোপনের সঠিক সময়:
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আপনি বছরের যে কোন সময়েই ডালিম বা আনার বা বেদানা লাগাতে পারেন। তবে ডালিম মূলত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের গাছ। তাই গ্রীষ্মকালে এর চাষ করা উত্তম। তবে শীতকালেও এর চাষ করা হয়ে থাকে।
কিভাবে ডালিম/আনার/বেদানার বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন:
ডালিম আনার বা বেদানার বীজ বা চারা লাগানোর ক্ষেত্রে ২টি নিয়ম আছে। ১টি হল বীজ থেকে অপরটি হল কলম চারা থেকে। তবে বীজ থেকে চারা রোপন পদ্ধতিতে গাছের মাতৃগুনাগুন নষ্ট হয় এবং সঠিক ফলন পাওয়া যায় না। তাই এক্ষেত্রে কলম চারা লাগানোই উত্তম। তাই চারা লাগানোর আগে টবের মাটিকে গোবর, টি,এস,পি সার, পটাশ সার, এবং হাড়ের গুড়া একত্রে মিশিয়ে উক্ত পাত্রে রখে দিতে হবে কয়েকদিন। এর কিছু দিন পর আবার উক্ত মাটিকে খুচিয়ে দিয়ে রেখে দিতে হবে ৪ অথবা ৫ দিন। এর পর মাটি ঝুরঝুরা হলে উক্ত কলম চারাটি এনে টবে স্থাপন করতে হবে। ডালিম চারা টবে স্থাপনের পরে অল্প পরিমাণে পানি দিতে হবে। তবে পরবর্তীতে পানি বেশী করে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি না জমে থাকে।
সঠিক নিয়মে ডালিম/আনার/বেদানা চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল:
ডালিম আনার বা বেদানা লাগানোর জন্য নির্বাচিত ড্রাম বা টবের তলায় ৩-৫ টি ছিদ্র করে নিতে হবে । যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে । টব বা ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে ছায়াযুক্ত স্থানে ডালিম গাছ বেশী বড় হয় না এবং বেশী ফলনও পাওয়া যায় না। তাই টবটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন সারাদিন সূর্যের আলো পায়।
ডালিম/আনার/বেদানা চাষে পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন:
ডালিম বা আনার বা বেদানা চাষে সবচাইতে মারাত্মক শত্রু হচ্ছে ডালিমের প্রজাপতি বা ফলছিদ্রকারী পোকা। এই পোকা ফলের ভিতরে ঢূকে ফলের বীজ ও অন্যান্য অংশ খেয়ে ফেলে। এছাড়াও এই পোকার আক্রমনের ফলে গাছে ছত্রাক এবং ব্যকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে।
কিভাবে ডালিম/আনার/বেদানা বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন:
ডালিম/আনার/বেদানার চারা রোপন করা হলে এর চার পাশের মাটিকে উচু করে দিতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি না জমে। চারা লাগানো শেষ হলে গাছের গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। একটি কাঠি দিয়ে গাছকে বেঁধে দিতে হবে। ডালিম/আনার/বেদানার গাছ ঘন শাখা-প্রশাখা যুক্ত বেশ ঝোপালো গাছ তাই একে নিয়মিত ছাঁটাই করা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়াও গাছের গোড়ায় যেন কোন প্রকার আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
ডালিম/আনার/বেদানার খাদ্য গুণাগুণ:
আনার বা বেদানার ভিতরে অনেক খাদ্যপুষ্টি বিদ্যমান। এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ পানি, ১.৫ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে।
ডালিম/আনার/বেদানার ঔষধি গুনাগুন:
ডালিম/আনার/বেদানার অনেক ঔষধি গুণাগুণ বিদ্যমান। এর রস খেলে আমাশয় ও উদারময় রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে। এছাড়াও এটা খেলে আরও অনেক ধরণের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এটাকে কবিরাজি ঔষধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
কখন ডালিম/আনার/বেদানা সংগ্রহ করবেন:
ডালিম/আনার/বেদানা ফুল আসার পর থেকে ৬ মাস লাগে ফল পাকতে। এক্ষেত্রে দেখা যায় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মাসে ফল পাকে। তারপর ফল সংগ্রহ করতে হবে
সংকলনে- মোঃ এজাজ আহমেদ
Kommentare